শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য ইবি কর্মকর্তার: ছাত্র সংগঠনের নিন্দা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সেকশন অফিসার (সাবেক কর্মচারী) আরিফুল হক ওরফে আরিফ বিশ্বাস।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা হয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রগঠনগুলো।
জানা গেছে, কর্মকর্তাদের ১৬দফা দাবি আদায়ে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার সকাল ১১টায় দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করে কর্মকর্তা সমিতির একাংশ। এ সময় আরিফুল হক নামের কর্মকর্তা বলেন, ‘একটা ছাত্র আসলে আবেদন পত্র লিখতে পারে না, আমি তার প্রমাণ। সার্টিফিকেট তোলার সময় আবেদন পত্র লিখতে হয়। তারা আবেদন পত্র লিখতে পারে না। সে ছাত্র ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয়টা কর্মকর্তাদের নামে লিখে দেয়া হোক।’
এরপরই তার এই বিতর্কিত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং ফুঁসে উঠে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তার এই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন অনেকে। কেউ কেউ সেই কর্মকর্তার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র মৈত্রী ইবি শাখা।
ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে সভাপতি নুরুন্নবী ইসলাম সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক জি কে সাদিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য। সেকশন অফিসার আরিফুল হক শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়ার জন্য এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা মাপার দায়িত্ব তার নয়। শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন আমরা তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার করে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
একই আল্টিমেটাম ও আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন ছাত্র মৈত্রীর নেতৃবৃন্দরাও। সংগঠনটির সভাপতি আব্দুর রউফ ও সাধারণ সম্পাদক ম্তুাসিম বিল্লাহ পাপ্পু প্রতিবাদ লিপিতে বলেন, আরিফুল হকের বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের মর্মাহত করেছে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন ধিক্কারজনক মন্তব্য করে তিনি প্রকারন্তরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কেই অপমান করছেন। আগামী ২৪ ঘন্টার মাঝে বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের কাছে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।
এ বিষয়ে আজ রোবাবার সকালে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে স্বারকলিপিও প্রদান করে ছাত্রমৈত্রীর নেতৃবৃন্দরা। এসময় সভাপতিসহ অন্য নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ব্যাপক ক্ষোভের মুখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা। গতকার রাত পৌনে ১২টার দিকে তিনি ওই স্ট্যাটাস দেন। তিনি দাবি করেন, কর্মবিরতি চলাকালে ওই বক্তব্য তিনি উদাহরণস্বরূপ বলেছেন। তিনি কোন ব্যক্তি বা মহলকে উদ্দেশ্য করে বলেননি। তিনি বলেন, যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আশাকরি বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
এবিষয়ে কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি শামসুল ইসলাম জোহা বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা সমিতির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেছি এবং ক্ষমা চেয়েছি।
এবিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, একজন শিক্ষার্থী যোগ্যতা দিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তাদেরকে নিয়ে এমন মন্তব্য করা অবশ্যই ক্ষমার যোগ্য নয়। শিক্ষার্থীদের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে ক্ষমা না চাইলে বিষয়টি আমরা দেখবো।